Monday 12 October 2015

ইচ্ছে বিরিয়ানি


কর্তার জন্মদিনে কি বিশেষ পদ রাঁধব ভাবতে ভাবতে যখন দিশেহারা তখন ভাবলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবারের লিস্টে সবচেয়ে প্রথমে যে পদ তা দিয়েই আমার প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন পালন করব। ভেবে তো নিলাম কিন্তু বানাবো কি করে? কখনো যে বিরিয়ানি বানাইইনি। শুরু হল ইন্টারনেট, রেসিপির বই ঘাঁটাঘাঁটি, বন্ধুবান্ধবদের কাছে পরামর্শ নেওয়া। এত চর্চার ফলে সবমিলিয়ে  ঘেঁটে আমি ঘ হয়ে গেলাম। তারপর ভাবলাম ধুত্তোর! গুলি মেরেছে সবকিছুর, নিজের ইচ্ছে মতই বানাবো "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

ইচ্ছে মত চলার ফল কখনোই খারাপ হয় না।  খেয়ে এবং দেখে সবাই অবাক, বলে "বানালি কি করে?"। যার উদ্দেশ্যে করা সে তো পাত শেষ করেই বলে "আর কোন রেস্তোরা নয় বিরিয়ানি খাব তো ইচ্ছে বিরিয়ানি!"
তাই আজ ইচ্ছে হেঁশেলের ভালোবাসার আঁচে, সাধস্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরী হচ্ছে আমার "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

ইচ্ছে বিরিয়ানির ধাপ অনেকগুলো। একে একে সবগুলোর বিবরণ দিচ্ছি।আশা করি সবার কাছে  পদ্ধতিটা পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে পারব। সময় সাপেক্ষ হলেও, খুব একটা কঠিন নয় "ইচ্ছে বিরিয়ানি"।

বিরিয়ানি মশলা 

একটা শুকনো খোলায় এলাচ (১০ গ্রাম), লবঙ্গ (১০ গ্রাম), দারুচিনি (১০ গ্রাম), সাদা জিরে (৫ গ্রাম), সাদা মরিচ (৫ গ্রাম), জয়িত্রি (৫ গ্রাম), জায়ফল (একটা ফলের ১/৪ ভাগ), তেজপাতা (১টা) আর শুকনো লঙ্কা (১টা) নেড়ে, মিক্সিতে পিষে নিলেই বিরিয়ানি মশলা তৈরি।

ক্ষীর  

৩ কাপ দুধ, ১ চামচ চিনি এবং ১ চিমটে নুন নিয়ে ফুটিয়ে এক কাপ ঘন ক্ষীর করে নিতে হবে।

বিরিয়ানির আলু এবং ডিম

যত জন খাবে সেইমত হিসেব করে আলু এবং ডিম দিতে হবে। আমি ৮-১০ জনের জন্য করেছিলাম। সেইরকমই হিসেব দিচ্ছি। ৪-৫টা বড় আলু নিয়ে খোসা ছারিয়ে  দু টুকরো করে  (আকারে ছোট হলে গোটা ৮-১০ টা দিতে পারেন) ধুয়ে সাদা তেলে ভেজে নেবেন। এরপর যা করতে হবে পরের ধাপে পেয়ে যাবেন। একইভাবে ৮-১০ টা ডিম নিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে রেখে দেবেন।

বেরেস্তা বা ভাজা পিঁয়াজ 

বিরিয়ানির স্বাদবর্ধক হিসেবে বেরেস্তা বা ভাজা পিঁইয়াজ ব্যবহার করা হয়। ২টো বড় বা চারটে মাঝারি মাপের পিঁয়াজ মাঝখান থেকে লম্বালম্বি চিড়ে আড়াআড়ি পাতলা করে কেটে ফেলুন। এবার ছাঁকা তেলে বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন। পিঁয়াজ ভাজার সময় তেলে দু-চার দানা চিনি দিতে পারেন, রঙ ভালো হবে।

বিরিয়ানির মাংস

উপকরণঃ

(i) খাসির মাংস (১ কেজি, ১০ গ্রামের ১০ টুকরো),
(ii) পিঁয়াজ (১ কেজি, ৫০০ গ্রাম বাটা + ৫০০ গ্রাম কুচানো)
(iii) রসুন (১টা গোটা)
(iv) আদাবাটা (২ টেবিল চামচ)
(v) লঙ্কা বাটা (২ চামচ)
(vi) টক দই (১০০ গ্রা)
(vii) ধনে ও জিরে গুঁড়ো (১ টেবিল চামচ)
(viii) বিরিয়ানির মশলা (২ টেবিল চামচ)
(ix) কেওড়ার জল (২ টেবিল চামচ)
(x) মিঠা আতর (১ ফোঁটা)
(xi) নুন (স্বাদমতন)
(xii) দুধ (১ লিটার)
(xiii) চিনি (সামান্য)
(xiv) সাদা তেল (২ টেবিল চামচ)
(xv) সরষের তেল (১ চামচ)

রান্না শুরুঃ 

মাংস ধুয়ে  জল ঝরিয়ে পিঁয়াজ, রসুন, আদা লঙ্কাবাটা, টক দই, ধনে জিরে গুঁড়ো, নুন, চিনি এবং সরষের তেল দিয়ে মেখে কমপক্ষে আধঘন্টা রেখে দিন।কড়ায় সাদা তেল গরম করে তাতে পিঁয়াজকুচি দিয়ে ভেজে নিন। তারপর ম্যারিনেটেড মাংসটা মিশিয়ে কষাতে হবে। খানিকক্ষণ কষানোর পর বিরিয়ানি মশলা, কেওড়ার জল, ক্ষীর মিশিয়ে আবার কষাতে হবে। তেল ছেড়ে আসলে এক ফোঁটা মিঠা আতর আর ১ লিটার দুধ মিশিয়ে ফুটতে দিন। মাংস ফুটে উঠলে প্রেসার কুকারে ঢেলে এক কাপ জল মিশিয়ে দিন। প্রেসার কুকার হাই ফ্লেমে ১০ মিনিট এবং লো ফ্লেমে ২০ মিনিট বসালে মাংস ভালো সেদ্ধ হয়। মাংস সেদ্ধ হলে প্রেসার কুকার থেকে বের করে নিতে হবে। যে গ্রেভিটা রয়ে গেল তার মধ্যে ভেজে রাখা আলুগুলো দিয়ে ১০ - ১৫মিনিট ঢিম আঁচে রেখে দিলেই বিরিয়ানির আলু রেডি। এবার ঐ গ্রেভি থেকে বিরিয়ানির আলু বের করে নিয়ে আবার মাংসের টুকর গুলো ঢেলে দিয়ে গ্রেভিটাকে ফুটি য়ে মাখো মাখো করে নিলে বিরিয়ানির মাংসও রেডি।

বিরিয়ানির ভাত 

উপকরণঃ

(i) বিরিয়ানির চাল (১ কেজি)
(ii) এলাচ (৫টা)
(iii) দারুচিনি (২ টুকরো)
(iv) লবঙ্গ (৪-৫ টা)
(v) তেজপাতা (১টা)
(vi) ঘি (১ চামচ)
(vii) নুন (২ টেবিল চামচ)

রান্না শুরুঃ 

চাল ধুয়ে অন্তত আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে (আমি ১ ঘন্টা রেখেছিলাম)। একটা বড় ডেকচিতে জল গরম করতে দিতে হবে। জলের মধ্যে নুন, তেজপাতা এবং গোটা গরম মশলাগুলো একটু থেতো করে মিশিয়ে দিন। জল ফুটে উঠলে তার মধ্যে চাল দিয়ে ফুটতে দিন। চালগুলো লম্বা শেপে এসে গেলেই জলের মধ্যে ঘি মিশিয়ে ভাত উপুর দিয়ে দিন। এতে ভাত ঝরঝরে হবে।

মূল পর্ব 

মূল রান্নার মালমশলাঃ

(i) বিরিয়ানির ভাত
(ii) মাংস
(iii) আলু
(iv) ডিম
(v) বেরেস্তা
(vi) ক্ষীর
(vii) বিরিয়ানি মশলা
(viii) দুধে ভেজানো জাফরান (২ চামচ)
(ix) কেওড়ার জল (১ চামচ)
(x) মিঠা আতর (১ ফোঁটা)
(xi) ঘি (৩ টেবিল চামচ)

দম শুরুঃ 

বিরিয়ানির পাত্রটায় ভালো করে ঘি মাখিয়ে নিয়ে একদম নিচে আলু, ডিম ও মাংসের অর্ধেক দিয়ে দিন। এর ওপর একটা স্তর ভাত দিয়ে তার ওপর বেরেস্তা, এক চামচ ক্ষীর, এক চামচ বিরিয়ানি মশলা, এক চামচ ঘি, এক চামচ কেওড়া জল আর একটু জামরান মেশানো দুধ ছড়িয়ে দিন। তার ওপর বাকি আলু, ডিম, মাংস দিয়ে দিন। তার ওপর বাকি ভাত এবং একদম ওপরে অবশিষ্ট বেরেস্তা, দুধ জাফরান, এক চামচ বিরিয়ানি মশলা, এক চামচ ঘি ও এক ফোঁটা মিঠা আতর ছড়িয়ে দিন।

এবার পাত্রটাকে সরাসরি  আগুনের ওপর না বসিয়ে, সামান্য আকারে বড় আরেকটা পাত্রে জল ভরে তার মধ্যে বসান বা কোন তাওয়া ওপর বসাতে পারেন । এতে পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে না। বিরিয়ানির পাত্রটার ঢাকা যেন ভালোভাবে বন্ধ হয়। এই অবস্থায় আধ ঘন্টা মত ঢিম আঁচে বসিয়ে রাখলেই ইচ্ছে বিরিয়ানি তৈরী। (মাঝে মাঝে ঝাঁকিয়ে দিতে হবে।)

যাঁদের মাইক্রোওভেন আছে তাঁরা পরিবেশনের আগে ৫-৭ মিনিট মত গরম করে নিতে পারেন। এতে বিরিয়ানি ঝরঝরে হবে, খেতেও ভালো লাগবে। মাইক্রোওভেন না থাকলে দমেই বসিয়ে রাখুন পাতে দেওয়ার আগে অবধি।

বিঃ দ্রঃ

(i) বিরিয়ানি তৈরী সময় সাপেক্ষ, তাই ক্ষীর, বিরিয়ানি মশলা এগুলো আগে থেকে তৈরী করে রাখতে পারেন।
(ii)বাড়িতে ক্ষীর বানাতে না পারলে দোকান থেকে কেনা খোয়া ক্ষীরও ব্যবহার করতে পারেন।
(iii) কড়ায় বেশী করে সাদা তেল দিয়ে  প্রথমে বেরেস্তা বানিয়ে তারপর ঐ তেলেই বিরিয়ানির আলু ভেজে তুলে নিয়ে তেল কমিয়ে বিরিয়ানির মাংস রান্না করতে পারেন।
(iv) বিরিয়ানির ভাত যখন করবেন তখন অন্য কোন কাজ করবেন না। বরং ভাতের ফ্যান ঝরানোর জায়গা প্রস্তুত রাখবেন, ভাত খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
(v) দুভাবে ফ্যান ঝরানো যেতে পারে - (ক) একটা খবরের কাগজ পেতে তার ওপর নোড়ার মত ভারী কিছু রেখে হাঁড়ি উল্টে ভাত উপুর দেওয়া, (খ) ঝাঁঝরি জাতীয় পাত্রে ভাত ঢেলে ফ্যান ঝরিয়ে নেওয়া।
(vi) ভাত তৈরীর সময় নুন এমন ভাবে দিতে হবে যাতে পরে আলাদা নুন না লাগে।
(vii) আমি ৮-১০ জনের খাবার মত হিসেব দিলাম।  লোক কমবেশী হলে মালমশলার পরিমাণও সেই অনুপাতে বদলাবে।
(viii) ইচ্ছে বিরিয়ানির সঙ্গে সাদাশাহী চিকেন জমে যায়।

এবার সবাই বাড়িতেই তৈরী করে ফেলুন রেস্তরাঁর স্বাদের "ইচ্ছে বিরিয়ানি"। সামনেই পুজো, ইচ্ছে বিরিয়ানি হয়ে যাক নবমীর স্পেশাল মেনু।


দো-দৈ মুরগি

এক একটা দিন এমন হয়, সেদিন মন - মাথা পুরো তেতো হয়ে থাকে। কেন হয়, কি জন্য হয় ছাতার মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আজ তেমনই একটা দিন ছিল। সারাদ...