Sunday 26 November 2017

গলদা সুগন্ধী

মাছ কাকু মানে যিনি আমার শ্বশুরবাড়িতে বংশানুক্রমে মাছ ডেলিভারি দিয়ে চলেছেন তাঁর কাছ থেকে বাবা বেশ কিছু গলদা চিংড়ি নিয়েছিল কাল। ভাবলাম মালাইকারি বানাই। প্রথাগত ভাবে বানানো মালাইকারি কখনো খাইনি, জানিও না কেমন খেতে। আমি নিজের মতন করে একটা মালাইকারি বানাই, একটু মিষ্টি মিষ্টি খেতে হয়। মা মানে আমার শাশুড়ি মা চিংড়ি খেতে ভীষণ ভালোবাসে। অন্য কোনো মাছ তো পাতে পারে না, শুধু চিংড়ি আর ইলিশ। । কিছু দিন হলো মুখে খুব অরুচিও হয়েছে মায়ের। বলছে কিছুই খেতে ভালো লাগছে না। হঠাৎ চিংড়ির আগমন দেখে তো মাতৃ দেবী হেবি খুশ। আমায় জিগালো,
কি করবি এগুলোর?
মালাইকারি করবো ভাবছি
নাহ, মিষ্টি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে না
কেমন খাইবেন বলুন মাতে ?
বেশ খেতে ভালো অন্য রকম কিছু কর না!
যথা আজ্ঞা।
মাতৃদেবীর ইচ্ছেপূরণ করতে , কিভাবে বানাই ভাবতে ভাবতে এই গলদা সুগন্ধীর আইডিয়া মাথায় এলো। খুব সহজ এবং কমন মশলা, কিন্তু খেতে দারুন, এবং দারুন তার গন্ধ। তাই নাম দিয়ে দিলাম "গলদা সুগন্ধী"। মাতৃদেবীতো খেয়ে আবার কবে হবে সেই হিসেব নিকেশ শুরু করে দিলো।
আজ ইচ্ছেহেঁসেলের পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে সেই "গলদা সুগান্ধী" । 😊

টুকটাক যা লাগবেঃ

১) গলদা চিংড়ি (৮-১০টা)
২) কালো সরষে (ছোট ১ চামচ)৩) সাদা সরষে (ছোট ১ চামচ)
৪) পোস্ত (বড় ১ চামচ)
৫) নারকোল বাটা বা কোরা (বড় ১ চামচ)
৬) কাঁচালঙ্কা (৭-৮ টা)
৭) লেবুর রস (একটি মাঝারি মাপের গোটা পাতিলেবু)
৮) টকদই (৫০ গ্রাম)
৯) হলুদ ( ছোট ১ চামচ)
১০) নুন (স্বাদমতন)
১১) চিনি ( ছোট হাফ চামচ)
১২) সরষের তেল
১৩) ধনে পাতা কুচি


রান্না শুরুঃ

মাছ টাকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে হলুদ গুঁড়ো, নুন, অর্ধেক লেবুর রস আর একটু সরষের তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। আধঘন্টা মতন রাখলে ভালো হয়।
কালো-সাদা সরষে,পোস্ত, ৪-৫ টা কাঁচালঙ্কা, নারকোল কোরা, চিনি , স্বাদমতন নুন, টকদই, ধনেপাতা একসাথে বেটে নিতে হবে।
সরষের তেলে মাছ গুলো ভেজে তুলে নিয়ে ওই তেলেই বাটনা টা দিয়ে একটু ভেজে, বাটনার জায়গাটা দু-কাপ মতন জল দিয়ে ধুয়ে, ওই ধোয়া জল ঢেলে দিতে হবে। ফুটে উঠলে মাছগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে, মাছ সেদ্ধ হয়ে মাখামাখা হলে ৪-৫ টা চেরা কাঁচালঙ্কা, কাঁচা সরষের তেল এবং বাকি লেবুর রস ছড়িয়ে, চাপা দিয়ে ২-৩ মিনিট অল্প আঁচে রেখে দিয়ে, গ্যাস বন্ধ করলেই "গলদা সুগন্ধী" তৈরি।

বি.দ্র.

১) যে কোনো চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছও এই ভাবে রান্না করা যেতে পারে।
২) নারকোল না থাকলে নাও দিতে পারেন। তবে বলাই বাহুল্য যে নারকোল দিলে স্বাদ আরো বাড়ে।
৩) অনেকে সরষে-পোস্তর সাথে লেবুর রসের ব্যবহার ভেবে নাক কোঁচকাতে পারেন, কিন্তু একবার দিয়ে দেখবেন, বেশ সুগন্ধী হয়।
৪) যদি শীল-নোরায় বাটনা করেন, তাহলে দুরকম সরষে, পোস্ত, কাঁচালঙ্কা, চিনি, নারকোল,ধনেপাতা একসাথে বেটে নিয়ে,একটা জায়গায় এই বাটনা, টকদই, লেবুর রস, নুন, কাঁচা সরষের তেল একসাথে মিশিয়ে রান্নায় দেবেন। শীল ধোয়া জল টা রেখে দেবেন, রান্নায় এমনি জলের বদলে ওই জলটা দেবেন।
৫) যাদের কাঁচালঙ্কা বাটলে হাত জ্বালা করে, তারা থেঁতো করে দেবেন।
৬) আমি ধনেপাতা সবটাই ভুল করে বাটনায় দিয়ে দিয়েছিলাম। একটু বাঁচিয়ে রাখবেন। নামনোর আগে যখন তেল, কাঁচালঙ্কা,লেবুর রস যোগ করবেন তখন একটু ধনেপাতা কুচিও দিয়ে দেবেন। দারুন জমবে।
৭) রান্নায় এমনি জল ব্যবহার করাই যায়, কিন্তু বাটনার জায়গা ধোয়া জল দিলে, অন্যরকম একটা স্বাদ হয়। মাকে দেখে শেখা।
৮) রান্নায় সরঞ্জামের মাপ যোগ, আমি নিজের মতন করে বললাম, আপনারা আপনাদের এবং নিজেরদের প্রিয়জনরা যেরম ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেবেন।😊
ভালো লাগবে আশা রাখলুম।
লাগলো কেমন, তা জানার অপেক্ষায় থাকলুম।

Sunday 29 October 2017

দিদার দুই রেসিপি

আমার মা সব কথাতেই বলে রান্নাটা নাকি জিনের ব্যাপার। জিন কি ভূত কি জিনি তা বলতে পারব না, তবে একথা সত্যি বটে আমার দিদা এবং মা-র হাতের রান্নার জুরি মেলা ভার। ছোটবেলায় যখন সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করত, আমার প্রিয় খাবার কি, চোখ বন্ধ করে এক বাক্যে বলতাম, দিদার হাতের যেকোন রান্না। দিদার হাতেরই একটা অদ্ভুত গুণ ছিল। শুকনো লঙ্কা ভাজার তেল, মুড়ি, পিঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত মাখা থেকে কচু বেগুন দিয়ে ইলিশ মাছের ঝাল - সবকিছুই আমার কাছে ছিল অমৃত সমান। দিদা দুবছর হল চলে গেছে, কিন্তু মায়ের কথায় ঐ জিনের জন্যেই হয়ত তার রান্নার সিকিভাগ গুণ আমার মধ্যেও এসে পৌঁছেছে। নতুন রান্না যাইই করি না কেন সাবেকি রান্নার নিয়ম কানুন দিদা দিদিমণির অনুসরণে না করা ছাড়া গতি নেই। যেটুকু পারি, যেটুকু করি, যেটুকু শিখেছি সবই মা-র থেকে। আর মা শিখেছে দিদার থেকে। তাই সাবেকি রান্না করার জন্য, ঐ স্বাদ আবার ফিরে পাওয়ার জন্য দিদার রন্ধন প্রণালীই শেষ কথা।

আজ যে দুটো রান্না সবার সাথে ভাগ করব, বলাই বাহুল্য সে দুটো ভায়া মা, দিদার থেকেই শেখা। হাতেকলমে কোনদিনও শেখার সুযোগ পাইনি, মায়ের মুখে শুনে আর মুখে লেগে থাকা সেই স্বাদের অনুসরণেই হঠাৎ করেই বানিয়ে ফেলেছিলাম এই দুই পদ।

কচুর শাক ঝাল

আমার দিদা নিজের মতন করে কচুর শাক রান্না করতো ৷ এত্তো ভালো খেতে হতো যে বলে বোঝাতে পারব না ৷ রান্নার যে বাঙাল ঘটি বলে কিছু হয় না তা দিদার রান্না খেয়েই বুঝতাম ৷ বলাই বাহুল্য মা-ও একইরকম অসাধারণ করে ঐ রান্নাটা ৷ আমি কেমন করি ঠিক জানিনা তবে দেখি বাড়ির সবাই তৃপ্তি করে খাচ্ছে , এটুকুতেই আমার পরিতৃপ্তি ৷

টুকটাক যা লাগবে :

(i) কচুর শাক (এক আটি বা একটি গাছ)
 (ii) কালো সরষে (ছোট এক চামচ)
(iii) রাই সরষে মানে সাদা সরষে (ছোট এক চামচ)
(iv) পোস্তো (ছোট দুই চামচ)
(v) আদা বাটা (ছোট চামচের অর্দ্ধেক)
(vi) রসুন (এক কোয়া)
(vii) কাঁচালঙ্কা (১টা চাইলে বেশি দিতেই পারেন)
(viii) চেরা কাঁচালঙ্কা (২-৩ টে)
(ix) সরষের তেল
(x) পাতিলেবু (৪-৫ টুকরো বা একটা গোটা)
(xi) নুন
(xii) চিনি
(xiii) কালো জিরে (ছোট এক চামচ)
(xiv) জিরে (হাফ ছোট চামচ)
(xv) নারকোল কোরা (২ চামচ)

রান্না শুরু :

কচুর শাকের গা ছাড়িয়ে, টুকরো করে, ধুয়ে জল ঝরিয়ে, কড়ায় সেদ্ধ হতে দিতে হবে৷ শাকটা কড়ায় দিয়ে, একটু নুন দিয়ে, একটা চাপা দিয়ে মিনিট ৪-৫ রাখলেই শাক সেদ্ধ হয়ে যাবে৷ একটা ঝাঁঝরি তে ঢেলে, শাকের extra জল টা চাপ দিয়ে বার করে দিতে হবে৷

এবার বেশ খানিকটা সরষের তেল গরম করে, তাতে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে একটু ভেজে শাকটা দিতে হবে৷ একটু নাড়াচাড়া করে পরিমাণ মতন নুন, মিষ্টি (সামান্য taste balance এর জন্য) লেবুর রস দিয়ে ভাজতে হবে৷
সরষে, রাই সরষে, পোস্ত, আদা, জিরে, রসুন, কাঁচা লঙ্কা একসাথে বেটে রাখতে হবে৷

শাক একটু ভাজা হলে ঐ বাটনা আর চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে, মিশিয়ে, কষিয়ে, তেল ছেড়ে আসলে ওপরে নারকোল কোরা ছড়িয়ে দিলেই, কচুর শাক ঝাল, গরম ভাতের পাতে দোসর হওয়ার জন্য রেডি৷

বিঃ দ্রঃ

(i) কচুর শাকে ভীষণ হাত কুট কুট করে তাই যতটা কম পারবেন হাত ব্যবহার করবেন৷ শাক কুটে ঝাঁঝরিতে রেখে জলে তলায় রেখে ধুয়ে দিন, ঝাঁঝরি ধরে শাক কড়ায় ঢেলে দিন৷ একটি হাতার উল্টো দিক দিয়ে চেপে সেদ্ধ কচুর শাকের extra জল বের করুন৷
(ii) যদি হাত কুটকুট করে, লেবুর রস বা টক জাতীয় কিছু হাতে মেখে নিন৷
(iii) অনেকে কচুর শাকে চিনি দেন না৷ চাইলে নাও দিতে পারেন৷
(iv) কচুর শাক কাঁচা অবস্থায় অনেক বেশি মনে হয় .কিন্ত রান্না হলে অনেকটা কমে যায় তাই নুনের পরিমাণ বুঝে দেবেন৷ আর নিজের পরিবারের জন্য কতটা পরিমাণ রান্না করবেন সেটাও খেয়াল রাখবেন৷

পুঁই পিঁয়াজ পোস্ত

খুব সহজে চটপট হয়ে যায় অথচ রান্নার স্বাদও হয় অপূর্ব - এই ম্যাজিক বোধহয় মা-দিদার রেসিপিতেই সম্ভব। চিরপরিচিত পুঁইশাক দিয়ে সেরকমই এক ভিন্ন স্বাদের রান্না পুঁই পিঁয়াজ পোস্ত।

টুকটাক যা লাগবেঃ 

(i) ছোট করে কাটা পুঁইশাক (একটা বড় গাছ, ছোট করে কাটলে বর জামবাটির এক বাটি)
(ii) কুচনো পিঁয়াজ (২টো বড়)
(iii) পোস্ত বাটা (৪ বড় চামচ)
(iv) পাঁচফোড়ন (১ বড় চামচ)
(v) সরষের তেল (৩ বড় চামচ)
(vi) নুন (স্বাদমতন)
(vii) চিনি (স্বাদমতন)
(viii) চেরা কাঁচালঙ্কা (২টো)
(ix) শুকনো লঙ্কা (১টা)

রান্না শুরুঃ 

কড়ার মধ্যে সরষের তেল গরম করে পাঁচফোড়ন, শুকনো লঙ্কা দিয়ে একটু নড়াচড়া করে পিঁয়াজ কুচনো যোগ করতে হবে। পিঁয়াজ ভাজা হলে একটা জায়গায় তুলে রেখে ঐ তেলেই পুঁইশাকটা দিয়ে তার মধ্যে নুন ও চিনি দিয়ে নাড়া চাড়া করে ঢিম আঁচে চাপা দিয়ে রাখত হবে মিনিট ১৫-২০ মত যাতে শাক এবং ডাঁটা নরম হয়ে যায়। যদি ১৫ মিনিট পরও নরম না হয় তাহলে আরো কিছু সময় একই ভাবে রাখতে হবে। শাক এবং ডাঁটা সেদ্ধ হয়ে গেলে ওর মধ্যে পোস্ত আর এগে ভেজে তুলে রাখা পিঁয়াজ মিশিয়ে দিতে হবে। পুঁই, পোস্ত, পিঁয়াজ ভালোভাবে মিশে গিয়ে জল পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাজা ভাজা করে নামিয়ে নিলেই তৈরী "পুঁই পিঁয়াজ পোস্ত"।

বিঃ দ্রঃ

(i) পুঁইশাকের ডাঁটাগুলো দিয়ে ভালো করে গা ছাড়িয়ে, মাঝখান থেকে দুই টুকরো করে দেবেন। এতে ডাঁটা তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে।
(ii) এই পদটায় হালকা একটা মিষ্টি স্বাদ ভালো লাগে। তবে অনেকে পোস্তয় মিষ্টি মোটেই পছন্দ করেন না। তাঁরা চিনি ছাড়াই করতে পারেন। শুধুমাত্র পিঁয়াজ ভাজার সময় এক চিমটে দেবেন। এতে পিঁয়াজ ভাজার রং ভালো হয়।
(iii) "পুঁই পিঁয়াজ পোস্ত" গরম ভাতে সবচেয়ে ভালো জমে।

Sunday 2 April 2017

মনোহারি মুরগী

কত্তার বন্ধুদের জন্য মাংস রান্না করে পাঠাতে হবে। এদিকে কত্তার গাঁইগুঁই, "কি করে নিয়ে যাব? এদিকে ওদিকে ঝোল গড়াবে তো!" কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো মাংসটা ভেজে নিয়ে কষিয়ে যদি রান্না করি, তাহলে খেতেও জমবে আবার কত্তার খুঁতখুঁতানিরও সমাধান হবে। তেনার কলেজে পরীক্ষা চলছে, ব্যস্ততার শেষ নেই; তাই নিজেই টুকটাক যা লাগবে কিনে এনে রেঁধে ফেললাম "মনোহারি মুরগী"।
আমি বানিয়েছিলাম কেজি তিনেকের। এখানে এক কেজির হিসেবে সবিস্তারে বলছি।

টুকটাক যা লাগবেঃ

(i) মুরগীর মাংস (১ কেজি)
(ii) পিঁয়াজ (বড় চারটে, ১টা ডুমো করে কাটা, ৩ টে স্লাইস করে কাটা)
(iii) রসুন (গোটা ১ টা)
(iv) আদা বাটা (বড় ১ চামচ)
(v) ক্যাপসিকাম কুচি (৪ চামচ)
(vi) কাঁচালঙ্কা (যে যেমন ঝাল খাবেন)
(vii) ধনেপাতা কুচি (বড় ২ চামচ )
(viii) মেথি (ছোট চামচের ১ চামচ)
(ix) শুকনো লঙ্কা (২-৩টে)
(x) টক দই (১০০ গ্রাম)
(xi) টমেটো (২টো বড়)
(xii) কসুরি মেথি (এ চামচ)
(xiii) দুধ (১ কাপ)
(xiv) চিনি (১ চিমটে)
(xv) নুন
(xvi) সাদা তেল
(xvii) হলুদ
(xviii) সরষের তেল (১ চামচ)
(xix) চাটনি (বড় চামচের ২ চামচ)
(xx) মনোহারি মিশ্রণ (বড় চামচের ২ চামচ)

শেষ দুটো উপকরণ বিশেষভাবে বানিয়ে নিতে হবে। চাটনি বানানোর জন্য লাগবেঃ (i) বীজ ছাড়ানো পাকা তেঁতুলের কাৎ  - ২ চামচ (একছড়া পাকা তেঁতুল সামান্য ইষদুষ্ণ জলে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে মিনিট পাঁচেক। তারপর হাতে চটকে নিলেই কাৎ বেরিয়ে আসবে।), (ii) গুড় - ১ চামচ, (iii) ভাজা মশলা - ছোট ১ চামচ (শুকনো খোলায় জিরে, শুকনো লঙ্কা, পোস্ত নেড়ে, গুঁড়ো করে নিতে হবে।) (iv) নুন - ১ চিমটে।
একটা ছোট পাত্রে তেঁতুলের কাৎ ঢেলে গ্যাসে চড়িয়ে ফুটতে দিতে হবে। ফুটে একটু ঘন হয়ে এলে এক চিমটে নুন আর গুড় মিশিয়ে আরও একটু ঘন হলে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে তার মধ্যে ভাজা মশলা মিশিয়ে দিলেই চাটনি রেডি।

মনোহারি মিশ্রণ বানাতে লাগবেঃ (i) কাজু - ২০ গ্রাম, (ii) নারকেল কোড়া - ২ চামচ, (iii) এলাচ দানা - ১০-১২ টা, (iv) দুধ - আধ কাপ। সমস্ত উপকরণ একসাথে গ্রাইন্ডারে দিয়ে পেস্ট করে নিলেই মনোহারি মিশ্রণ রেডি।

রান্না শুরুঃ

মাংস ভালো করে ধুয়ে, জল ঝরিয়ে, চাটনি, হলুদ, সরষের তেল আর নুন দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে কমপক্ষে ঘন্টাখানেক। সাদা তেলে ম্যারিনেট করা মাংসগুলো একটা একটা করে ভেজে নিতে হবে। ঐ মাংস ভাজা তেলেই মেথি ফোড়ন দিয়ে ভালো করে ভেজে মেথি গুলো তুলে নিতে হবে। এবার ঐ তেলের মধ্যে শুকনো লঙ্কা আর কুচিয়ে রাখা পিঁয়াজের অর্ধেক দিয়ে ভাজতে হবে। ডুমো করে কাটা পিঁয়াজ, রসুন, আদাবাটা, ধনেপাতা কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, টমেটো, নুন, হলুদ একসাথে গ্রাইন্ডারে দিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করে ভাজা পিঁয়াজের মধ্যে ঐ পেস্টটাকে দিয়ে কষাতে হবে। টক দইয়ের মধ্যে সামান্য চিনি দিয়ে ফেটিয়ে ঐ মশলার মধ্যে মিশিয়ে কষাতে হবে। মশলা থেকে তেল ছাড়লে ভাজা মাংস গুলো ওর মধ্যে দিতে হবে। ভাজা মাংস আর মশলা ভালোভাবে মিশে গেলে শুকনো খোলায় নাড়া কসুরি মেথি গুঁড়ো, গরম মশলা দিয়ে কষাতে হবে। ৫ মিনিট পরে মনোহারি মশলা এবং বাকি আধ কাপ দুধ মিশিয়ে high flameএ ২ মিনিট নড়াচড়া করে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। এবার আরেকটা কড়ায় তেল গরম করে বাকি পিঁয়াজগুলো deep fry করে তুলে নিয়ে মাংসের ওপর ছড়িয়ে দিলেই মনোহারি মুরগী is ready to serve.


বিঃ দ্রঃ

(i) মাংসের টুকরো গুলো ছোট ছোট হলে ভালো হয়।
(ii) চাটনির বদলে লেবুর রস ম্যারিনেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু চাটনি ব্যবহার করলে যে রং আসবে তা লেবুর রসে আসবে না।
(iii) তেঁতুলের কাৎএর পরিমাণ সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। বেশী হয়ে গেলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।
(iv) মশলাপাতির পরিমাণ নিজের স্বাদমতন, স্বাস্থ্যমতন এবং ইচ্ছেমতন কমিয়ে বাড়িয়ে নিতে পারেন।
(v) রুটি বা পরোটার সঙ্গে মনোহারি মুরগী ভালো জমে।
(vi) কাইয়ের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে মনোহারি মশলা মেশানোর পর একটু বেশী পরিমাণে দুধ মিশিয়ে দেবেন।
(vii) এই রান্নায় জল মেশাবেন না। জল মেশালে স্বাদ কমে যাবে।
(viii) ইচ্ছে হলে খাসির মাংসও এইভাবে রান্না করে দেখতে পারেন।

Thursday 2 March 2017

ডিম ভাপা পকোড়া

মাঝে মাঝে মনে হয় এই যে আশেপাশে যত ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা রেঁস্তোরা আছে, এরা সবাই একই ধরণের খাবার কেন বিক্রী করে কে জানে! মানে "ক" দোকান যা বিক্রী করছে, "খ" নামক দোকানও সেই একই খাবার বিক্রী করছে এবং "গ" নামক দোকানের মেনুকার্ডেও সেই একই খাবার ঠাঁই পায় অন্য নামে। কেন রে বাপু একটু রদবদল করলে মানুষের স্বাদবদলও ঘটে আবার বিক্রীও বাড়ে। যাই হোক আমার না আছে দোকান, না রেঁস্তোরা, আছে শুধু এক ইচ্ছেহেঁশেল। যেখানে আমি আমার ভালোবাসার, কাছের মানুষগুলোর জন্য চিরপরিচিত স্বাদে রদবদল করে স্বাদকোরকের চাহিদা মেটাই। আর সেই খাবারগুলোর রান্নার বিবরণ সবার সাথে ভাগ করে দিই যাতে সবাই সবার ভালোবাসার, মনের কাছের মানুষগুলোকে তাই খাইয়ে স্বাদবদল ঘটাতে পারে।

তাই আজ অনেকদিন পর ইচ্ছেহেঁশেলের পাতায় চিরপরিচিত হাতের কাছে থাকা টুকটাক উপকরণ দিয়ে তৈরী ভাপা ডিমের পকোড়া।

টুকটাক যা লাগবেঃ

ডিমঃ ৪+২ = ৬টা
পিঁয়াজ কুচিঃ ২টো বড়
রসুন কুচিঃ ৮-১০ কোয়া
আদা বাটাঃ ১ চামচ (ছোট)
কাঁচা লঙ্কা কুচিঃ যে যেমন ঝাল খাবেন
ধনে পাতা কুচিঃ ১ চামচ
বেকিং পাউডারঃ ১ চিমটে
নুনঃ স্বাদ মতন
চিনিঃ ১ চিমটে
কর্ন ফ্লাওয়ারঃ ২ চামচ
ময়দাঃ ২ চামচ
সাদা তেলঃ

রান্না শুরুঃ

একটা বড় বাটিতে চারটে ডিম ফাটিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, লঙ্কা কুচি, নুন, চিনি, ধনে পাতা কুচি, বেকিং পাউডার দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে।

এবার একটা টিফিন কৌটোয় ভালো করে তেল মাখিয়ে, তার মধ্যে ডিমের মিশ্রণটা ঢেলে টিফিন কৌটোর মুখ ভালো করে আটকে দিতে হবে। একটা প্রেসার কুকারে একটু জল দিয়ে টিফিন কৌটোটা বসিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন জলের স্তর টিফিন কৌটোর ঢাকনার ঠিক তলায় থাকে। high flame এ চারটে সিটি উঠলে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। যখন প্রেসার কুকারের ঢাকনা নিজে থেকে খুলবে, টিফিন কৌটো বের করে নিতে হবে।

টিফিন কৌটো থেকে ভাপা ডিম বের করে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে একটা একটা করে হালকা ভেজে নিতে হবে। কর্নফ্লাওয়ার, ময়দা আর বাকি ২টো ডিম, টাটকা আধভাজা গোলমরিচ, নুন একসাথে ভালো করে bater তৈরী করে নিতে হবে। এবার এই bater এ ডিমের টুকরোগুলো ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিলেই ডিম ভাপা পকোড়া is ready to serve.

বিঃ দ্রঃ

(i) যে কটা ডিম নেবেন, প্রেসার কুকারে সেই কটাই সিটি দেবেন।

(ii) প্রেসার কুকার থেকে টিফিন কৌটো বের করার জন্য সাঁড়াশি বা মোটা কোন কাপড়ের সাহায্য নেবেন।
(iii) কৌটো থেকে ভাপা ডিম বের করার জন্য বেলচা জাতীয় চামচ বা হাতার সাহায্য নেবেন।
(iv) কৌটো থেকে ডিম যদি মসৃণভাবে নাও বেরোয়, অসুবিধে নেই। টুকরো সমান না হলেও চলবে।
(v) বেকিং পাউডার চাইলে না-ও দিতে পারেন।

আজকাল বহু মানুষেরই নানান শারীরিক সমস্যা থাকে, যার কারণে খাওয়ার ওপরে অনেক বিধিনিষেধ চেপে যায়। সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড, বেশী ওজনের সমস্যা আরও কত কী! কিন্তু সব অসুখের সবচেয়ে বড় ওষুধ হল মনের আনন্দ। তাই সারা সপ্তাহ বা সারা মাস বাঁধা ধরা নিয়মে চলে একদিন নিজের ইচ্ছেমতন যা খুশি খাওয়ার অনুমতি তো ডাক্তারও দিয়ে থাকেন। তাই মন ভালো করতে, স্বাদকোরকের চাহিদা মেটাতে কোন একদিন বা যেকোনদিন বানিয়ে ফেলুন "ডিম ভাপা পকোড়া"।

দো-দৈ মুরগি

এক একটা দিন এমন হয়, সেদিন মন - মাথা পুরো তেতো হয়ে থাকে। কেন হয়, কি জন্য হয় ছাতার মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আজ তেমনই একটা দিন ছিল। সারাদ...