মাছ কাকু মানে যিনি আমার শ্বশুরবাড়িতে বংশানুক্রমে মাছ ডেলিভারি দিয়ে চলেছেন তাঁর কাছ থেকে বাবা বেশ কিছু গলদা চিংড়ি নিয়েছিল কাল। ভাবলাম মালাইকারি বানাই। প্রথাগত ভাবে বানানো মালাইকারি কখনো খাইনি, জানিও না কেমন খেতে। আমি নিজের মতন করে একটা মালাইকারি বানাই, একটু মিষ্টি মিষ্টি খেতে হয়। মা মানে আমার শাশুড়ি মা চিংড়ি খেতে ভীষণ ভালোবাসে। অন্য কোনো মাছ তো পাতে পারে না, শুধু চিংড়ি আর ইলিশ। । কিছু দিন হলো মুখে খুব অরুচিও হয়েছে মায়ের। বলছে কিছুই খেতে ভালো লাগছে না। হঠাৎ চিংড়ির আগমন দেখে তো মাতৃ দেবী হেবি খুশ। আমায় জিগালো,
কি করবি এগুলোর?
মালাইকারি করবো ভাবছি
নাহ, মিষ্টি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে না
কেমন খাইবেন বলুন মাতে ?
বেশ খেতে ভালো অন্য রকম কিছু কর না!
যথা আজ্ঞা।
মাতৃদেবীর ইচ্ছেপূরণ করতে , কিভাবে বানাই ভাবতে ভাবতে এই গলদা সুগন্ধীর আইডিয়া মাথায় এলো। খুব সহজ এবং কমন মশলা, কিন্তু খেতে দারুন, এবং দারুন তার গন্ধ। তাই নাম দিয়ে দিলাম "গলদা সুগন্ধী"। মাতৃদেবীতো খেয়ে আবার কবে হবে সেই হিসেব নিকেশ শুরু করে দিলো।
আজ ইচ্ছেহেঁসেলের পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে সেই "গলদা সুগান্ধী" । 😊
টুকটাক যা লাগবেঃ
১) গলদা চিংড়ি (৮-১০টা)২) কালো সরষে (ছোট ১ চামচ)৩) সাদা সরষে (ছোট ১ চামচ)
৪) পোস্ত (বড় ১ চামচ)
৫) নারকোল বাটা বা কোরা (বড় ১ চামচ)
৬) কাঁচালঙ্কা (৭-৮ টা)
৭) লেবুর রস (একটি মাঝারি মাপের গোটা পাতিলেবু)
৮) টকদই (৫০ গ্রাম)
৯) হলুদ ( ছোট ১ চামচ)
১০) নুন (স্বাদমতন)
১১) চিনি ( ছোট হাফ চামচ)
১২) সরষের তেল
১৩) ধনে পাতা কুচি
রান্না শুরুঃ
মাছ টাকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে হলুদ গুঁড়ো, নুন, অর্ধেক লেবুর রস আর একটু সরষের তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। আধঘন্টা মতন রাখলে ভালো হয়।
কালো-সাদা সরষে,পোস্ত, ৪-৫ টা কাঁচালঙ্কা, নারকোল কোরা, চিনি , স্বাদমতন নুন, টকদই, ধনেপাতা একসাথে বেটে নিতে হবে।
সরষের তেলে মাছ গুলো ভেজে তুলে নিয়ে ওই তেলেই বাটনা টা দিয়ে একটু ভেজে, বাটনার জায়গাটা দু-কাপ মতন জল দিয়ে ধুয়ে, ওই ধোয়া জল ঢেলে দিতে হবে। ফুটে উঠলে মাছগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে, মাছ সেদ্ধ হয়ে মাখামাখা হলে ৪-৫ টা চেরা কাঁচালঙ্কা, কাঁচা সরষের তেল এবং বাকি লেবুর রস ছড়িয়ে, চাপা দিয়ে ২-৩ মিনিট অল্প আঁচে রেখে দিয়ে, গ্যাস বন্ধ করলেই "গলদা সুগন্ধী" তৈরি।
বি.দ্র.
১) যে কোনো চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছও এই ভাবে রান্না করা যেতে পারে।
২) নারকোল না থাকলে নাও দিতে পারেন। তবে বলাই বাহুল্য যে নারকোল দিলে স্বাদ আরো বাড়ে।
৩) অনেকে সরষে-পোস্তর সাথে লেবুর রসের ব্যবহার ভেবে নাক কোঁচকাতে পারেন, কিন্তু একবার দিয়ে দেখবেন, বেশ সুগন্ধী হয়।
৪) যদি শীল-নোরায় বাটনা করেন, তাহলে দুরকম সরষে, পোস্ত, কাঁচালঙ্কা, চিনি, নারকোল,ধনেপাতা একসাথে বেটে নিয়ে,একটা জায়গায় এই বাটনা, টকদই, লেবুর রস, নুন, কাঁচা সরষের তেল একসাথে মিশিয়ে রান্নায় দেবেন। শীল ধোয়া জল টা রেখে দেবেন, রান্নায় এমনি জলের বদলে ওই জলটা দেবেন।
৫) যাদের কাঁচালঙ্কা বাটলে হাত জ্বালা করে, তারা থেঁতো করে দেবেন।
৬) আমি ধনেপাতা সবটাই ভুল করে বাটনায় দিয়ে দিয়েছিলাম। একটু বাঁচিয়ে রাখবেন। নামনোর আগে যখন তেল, কাঁচালঙ্কা,লেবুর রস যোগ করবেন তখন একটু ধনেপাতা কুচিও দিয়ে দেবেন। দারুন জমবে।
৭) রান্নায় এমনি জল ব্যবহার করাই যায়, কিন্তু বাটনার জায়গা ধোয়া জল দিলে, অন্যরকম একটা স্বাদ হয়। মাকে দেখে শেখা।
৮) রান্নায় সরঞ্জামের মাপ যোগ, আমি নিজের মতন করে বললাম, আপনারা আপনাদের এবং নিজেরদের প্রিয়জনরা যেরম ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেবেন।😊
ভালো লাগবে আশা রাখলুম।
লাগলো কেমন, তা জানার অপেক্ষায় থাকলুম।
লাগলো কেমন, তা জানার অপেক্ষায় থাকলুম।