Wednesday 24 June 2015

এক জোগাড় দুই পদঃ সাদাশাহী মুরগি ও দুধসাদা মিষ্টি

হাতে সময় খুব অল্প । বন্ধুরা আসবে, সবাই আড্ডা দেবে। তখন কি আর রান্নাঘরে থাকতে ইচ্ছে করবে? তাই চটপট একই জোগাড়ে দুটো পদ রেঁধে ফেললে কেমন হয়?

আমাদের সবার বাড়ীতেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা অতিথি আসলে আমাদের বাঙালি হেঁশেলের মেনুতে প্রধান যে দুটো খাবারের নাম থাকেই তা হল মাংস এবং মিষ্টি। মাংসের একটা বিশেষ পদ আর বিশেষ এক ধরনের মিষ্টি তৈরির উপকরণ গুলি এক হয় তাহলে হেঁশেলের কাজ চটজলদি মিটিয়ে তাড়াতাড়ি হুল্লোড়ে যোগ দেওয়া যায়।

আজ ইচ্ছে হেঁশেলের ভালবাসার আঁচে সাধ স্বপ্নের কড়াইতে আশার খুন্তি দিয়ে তৈরি  হচ্ছে সাদাশাহী মুরগি এবং দুধসাদা মিস্টি। এমন দুটি পদ যা খুব সহজ অনায়াসে বানিয়ে ফেলা যায় এবং অতিবড় নিন্দুকও এই রান্না খেয়ে প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। আর নিজেরও চেখে মনে হয় "নাহ!!! রান্নাটা আমি ভালই করি ।"

বিশেষ জোগাড় যা দুটি পদেই লাগবে তা হলঃ

কাজু (৫০ গ্রাঃ)
কিশমিশ (৫০ গ্রাঃ)
চালমগজ (৫০ গ্রাঃ)
নারকোল কোরা (ইচ্ছে মতন, বেশি দিলে খেতে বেশি ভাল হবে)
দুধ (৫০০ মিলি)
ছোটো এলাচ দানা (৪-৫)
(মাপযোগে আমি বরাবরই খুব কাঁচা, পরিমাণ কম বেশি নিজেদের মতন করে নিতে পারেন, তবে দুটি পদের জন্য এই পরিমাণটাই সঠিক হবে বলে আমার মনে হয়।)

বিশেষ উপকরণের প্রস্তুতিঃ 

কাজু, কিসমিস, চালমগজ, নারকোল কোরা আর এলাচ দানা দুধের মধ্যে দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিতে হবে।  তারপর নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে দুধটা আলাদা করে দিয়ে মিক্সার গ্রাইণ্ডার বা শিল নোড়ায় বেটে নিতে হবে (খুব মিহি করে বাটবেন না)। ঐ বাটনা টা আবার দুধের সাথে মিশিয়ে খানিকক্ষণ ফুটিয়ে, নামিয়ে, দুভাগ করে রেখে দিতে হবে। এক ভাগ মাংসে আর এক ভাগ মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার হবে।

সাদাশাহী মুরগী

বিশেষ উপকরণ ছাড়াও আর যা টুকটাক লাগবে তা হলঃ
মুরগির মাংস (১ কেজি)
পিঁয়াজ কুচি (অনেকটা)
রসুন কুচি (বেশ খানিকটা)
আদা কুচি (রসুন কুচির থেকে একটু কম)
ধনে পাতা কুচি (ইচ্ছে মতন)
ক্যাপসিকাম কুচি (ইচ্ছে মতন)
কাঁচালঙ্কা কুচি (ইচ্ছে মতন)
টক দই (২০০ গ্রাঃ)
শুকনো লঙ্কা (৪-৫ টা)
ছোট এলাচ (৪-৫ টা)
লবঙ্গ (২-৩ টা)
দারচিনি (১ টা)
দুধ (এক কাপ)
নুন (যেমন খান)
চিনি (সামান্য)
সাদা তেল (বেশ খানিকটা)

রান্না শুরুঃ

পিঁয়াজ কুচি কিছুটা রেখে বাকি পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, আদা কুচি, লঙ্কা কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, ধনে পাতা কুচি একসাথে বেটে নিতে হবে।
এবার ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা মাংসে এই বাটনা, আগে করে রাখা বিশেষ বাটনা, টক দই, নুন, দুধ এবং সামান্য সাদা তেল দিয়ে মেখে কমপক্ষে আধ ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।

এবার কড়ায় সাদা তেল গরম করে তাতে বাকি পিঁয়াজ কুচি,শুকনো লঙ্কা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, সামান্য চিনি ফোড়ন দিয়ে খানিকটা ভাজা হলে তার মধ্যে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে, ভাল করে মিশিয়ে চাপা দিয়ে দিতে হবে। এবার মাঝে মাঝে চাপা খুলে বেশ করে নেড়ে চেরে কসিয়ে আবার চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আবার কসাতে হবে। এইভাবে মাংস যখন সেদ্ধ হয়ে যাবে এবং গ্রেভি শুকনো হয়ে আসবে, তখন নামিয়ে নিতে হবে।

গরম গরম পরিবেশন করুন ঠোটের কোনে মিস্টি হাসি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ।

বি.দ্রঃ i) এই মাংসের পদটি শুকনোই ভাল লাগে। তবে কেউ যদি শুকনো খেতে ভাল না বাসেন তাহলে গ্রেভি তে আরও খানিকটা দুধ মিশিয়ে দিতে পারেন। জল মেশাবেন না,স্বাদ কমে যাবে।
ii) কাজু আর দুধ থাকে যেহেতু তাই চাপা দিয়ে আড্ডা দিতে চলে যাবেন না যেন, ধরে যাবে, মানে পুড়ে যেতে পারে। কিছুক্ষন পর পরই চাপা খুলে নাড়তে হবে যাতে পুড়ে না যায়।
iii) সাদাশাহী মুরগি সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে রুমালি রুটির সাথে, তাই যেদিন এটা বানাবেন সেদিন রুমালি রুটির আয়োজন রাখলে জমে যাবে। রুমালি ছাড়াও যে কোনো ধরনের রুটি,পরোটার সাথে ভাল লাগবে। তবে আমার কত্তার মতে ভাতের পাতেও দারুণ জমে সাদাশাহী মুরগি।
iv) একই ভাবে পাঁঠার মাংস দিয়েও ভাল হবে সাদাশাহী রান্না। ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড এবং কোলেস্ট্রল বেশি বন্ধুদের  মুরগিতেই থাকতে আনুরোধ করব কারন রান্নাটা এমনিতেই খুব রিচ হয়। 

দুধসাদা মিষ্টি

বিশেষ জোগাড় ছাড়াও আরো টুকটাক যা লাগবেঃ
দুধ (১ লিটার)
কাজুকুচি (অল্প)
কিশমিশ কুচি (অল্প)
খেজুর কুচি (অল্প)
চিনি (স্বাদমতন)
কনডেন্সড মিল্ক (ইচ্ছেমতন)
নুন (১ চিমটে)

রান্না শুরুঃ 

দুধের মধ্যে অল্প চিনি আর এক চিমটে নুন দিয়ে ফুটতে দিতে হবে। দুধ ফুটে উঠলে তার মধ্যে বিশেষ বাটনাটি মিশিয়ে আবার ভালো করে ফুটতে দিতে হবে। যখন দুধ ঘন হয়ে আসবে তখন কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে আরো বেশ খানিকক্ষণ ফোটাতে হবে। দুধ, বিশেষ বাটনা আর কনডেন্সড মিল্ক মিলেমিশে একাকার হয়ে খুব ঘন হয়ে এলে নামিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা করে তার ওপর কাজুকুচি, কিশমিশ কুচি এবং খেজুর কুচি ছড়িয়ে ফ্রিজে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে (ডিপ ফ্রিজে নয়)।

ঠণ্ডা ঠাণ্ডা দুধসাদা মিষ্টি পরিবেশন করে সবার মন ও মেজাজ মিষ্টি করে দিন।

বিঃ দ্রঃ i) বিশেষ মিশ্রণে কিশমিশ ও কনডেন্সড মিল্ক থাকায় পদটি যথেষ্ট মিষ্টি হবে। হালকা মিষ্টি পছন্দ করলে চিনি ব্যবহার নাও করতে পারেন।
ii) মিষ্টির ওপরে কাজু, কিশমিশ এবং খেজুরকুচির বদলে আপনারা আপনাদের ইচ্ছেমতন অন্যকিছু যেমন চকোলেট চিপস, পেস্তাকুচি, আমন্ডকুচি ইত্যাদি দিতে পারেন।
iii) এটা যেদিন বানিয়েছিলাম, ফ্রিজ থেকে বের করার পরই বন্ধুরা আমার রাঁধুনিসত্ত্বার মধ্যে যে ফটোগ্রাফার সত্ত্বা আছে তার বিকাশ ঘটতে দেবার কোন সুযোগ না দিয়েই হামলা চালিয়েছিল। তাই খুবই দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এই মিষ্টির ছবি আমি দিতে পারলাম না।   

5 comments:

  1. Ranna ta and tar sathe tips gulo darun. Specially mangso ta darun khete hobe bojha I jacche. Kotta ke taratari mangso kine ante bolchi. 😊👍

    ReplyDelete
  2. Thank you..ebar Ranna Kore kheye bolis kamon laglo

    ReplyDelete
  3. Toder sobar opinion amar kache khub important... Thank u

    ReplyDelete
  4. মাংস আর মিষ্টি ... জব্বর কম্বিনেশান (y)

    ReplyDelete

দো-দৈ মুরগি

এক একটা দিন এমন হয়, সেদিন মন - মাথা পুরো তেতো হয়ে থাকে। কেন হয়, কি জন্য হয় ছাতার মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আজ তেমনই একটা দিন ছিল। সারাদ...